শেষ ১০ দিন শুধুই আমলের

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাঁর ইতিকাফের জন্য মসজিদে একটি তাঁবু পাতা হতো। ইতিকাফকালীন তিনি রোগী দেখতে বের হতেন না, জানাজায় যেতেন না এবং নারীদের সংশ্রব ত্যাগ করতেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজনের মতো জরুরি কিছু ছাড়া তিনি তাঁর ইতিকাফস্থল ত্যাগ করতেন না।
ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদের ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফিরিশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিগণসহ সব সাহাবায়ে কিরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমল করেছেন। ’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)
রমজানের প্রথম দুই দশকেরও বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত আছে। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরো অনেক গুণ বেশি। কেননাএ দশকেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর। শবেকদর হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। অর্থাৎ এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সাওয়াব হতে পারে, এই রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। এ রাতের কারণেই পুরো রমজান তাৎপর্য ও ফজিলতপূর্ণ হয়েছে। আর পবিত্র কোরআনও অবতীর্ণ হয়েছে এই দশকের কদরের রাতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। অবশ্যই আমি সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। ’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)
তাই রমজানের বিগত দিনগুলো যাদের অবহেলায় কেটে গেছে, এখনো সময় আছে তাদের নিজেকে শুধরে নেওয়ার। মুক্তির অবারিত সুযোগ পেয়েও যারা নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারল না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কে?